মেধাবী শিক্ষার্থী বিশ্বাস ওয়াহিদুজ্জামান অর্ধডজনের অধিক সরকারী-আধাসরকারী চাকুরী ছেড়ে ২০০৫ সালে জেলা শিক্ষা অফিসে সহকারী পরিদর্শক হিসেবে যোগদান করলেন ।
ইতোপূর্বে হাইস্কুল-কলেজ ও প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতা করার অভিজ্ঞতা থাকায় শিক্ষা খুটিনাটি তাঁর জানা । তিনি শিক্ষার মান বৃদ্ধির নানারূপ চিঠিপত্রের ড্রাফট করে তাঁর অফিস প্রধানের নিকট দাখিল করেন। তাঁর অধিকাংশই অফিস প্রধান মাঠপর্যায়ে ছাড়তে চান না ।
কারন এটি করা হলে জেলার শিক্ষার মান অনেক উপরে উঠে যেতে পারে। এসব কাজ করতে শিক্ষকগণের কষ্ট হতে পারে, তাঁদের একটি অংশ অফিসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহও করতে পার্ ে। এজন্য চিঠিগুলি আর স্বাক্ষর হয় না। এভাবে বিশ্বাস ওয়াহিদুজ্জামান এ অনেক সদিচ্ছা ও স্বপ্ন মাঠে মারা যাচ্ছিল । বিষয়টি একদিন তিনি তাঁর অগ্রজ উপজেলা নির্বূাচন অফিসারের ঢাকার উত্তারার বাসায় বসে আলোচনা করছিলেন । অগ্রজ পরামর্শ দিলেন একটি প্রতিষ্ঠান তৈরী করো , এর ব্যানারে তুমি তোমার এ্সব মহতি ও জাতি গঠনমূলক কাজ করবে। যেমন কথা তেমন কাজ। এক শুক্রবারে বিশ্বাস ওয়াহিদুজ্জামান মাগুা সদরের আমুড়িয়াতে গ্রামের বাড়ীতে এসে চাচাতো ভাই প্রাইমারীর প্রধান শিক্ষক জান্নাত হোসেনের সাথে আলাপ করলেন । তিনিও একই পরামর্শ দিলেন। ঐদিন বিকালে আমুড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে গ্রামের শিক্ষক ও সুধীবৃন্দের নিয়ে একটি প্রস্তুতি সভা করা হল । সিদ্ধান্ত হল গ্রামের মরহুম শিক্ষক , চিকিৎসক ও সমাজপতি মরহুম ডা. আবুল কাশেম বিশ্বাসের নামে একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠার। পরদিন হতেই পাঠাগার শুরু হয়ে গেল।
ছোটভাই বিশ্বাস মহাসিন জামান পার্র্শবর্র্তী বুনাগাতি বাজারে গিয়ে একটি পরিত্যাক্ত ছোট টিনে পাঠাগারের নাম লিখে এনে টানিয়ে দিলেন স্কুলের তরুবাশের বেড়ায় । শুরু হয়ে গেল ডা. আবুল কাশেম স্মৃতি পাঠাগার। স্থান আমুড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিন ভবনের পশ্চিম পাশে পরিত্যাক্ত একটি রুম। হাইস্কুলের ক্লার্ক মাহবুবু মিয়া স্কুল হতে একটি পুরাতন নোটিশ বোর্ড । এভাবেই চলতে থাকল পাঠাগার।
২০১০ সালে মাধ্যমিক শিক্ষার উত্তরন নামক একটি বইয়ে বাণী নিতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক সুশান্ত কুমার সাহা এর নিকট গেলে তিনি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশন সনদ দেখতে চান। বললেন সমাজসেবা ডেপার্টমেন্ট হতে রেজিস্ট্রেশন করে আসেন। যেমন কথা তেমন কাজ । গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে একটি সাধারন সভা করে রেজিস্ট্রেশন এর জন্য রেজুলেশনসহ বিভিন্ন কাগজপত্র তৈরী করা হল । প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বাস ওয়াহিদুজ্জামান দেখলেন শুধু পাঠাগার নয়, অনেক প্রকার কাজ করতে হবে, সে জন্য তিনি সভায় নাম প্রস্তাব করলেন ডা. অবূল কাশেম শিক্ষা ফাউন্ডেশন । সবাই রাজী হলেন । ২/৩ মাসের মধ্যে মাগুরা জেলা সমাজসেবা অফিস হতে রেজিস্ট্রেশনও হয়ে গেল । নম্বর পড়ল ৬০৪/২০১০। মাগুরা শহরের ১৫ জন এলিট ব্যক্তি সমন্বয়ে ফাউন্ডেশন কমিটি ও গ্রামের ১১ জন নিয়ে পাঠাগার কমিটি চলতে থাকে।
এভাবে পাঠাগার ও ফাউন্ডেশন একসাথে চলতে থাকলো । ২০১২ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে কুষ্টিয়ার একজন সাংবাদিক কর্তৃক একটি ফিচার প্রকাশ হল ফাউন্ডেশন সম্পর্কে । এটি পড়ে খুলনার বিশিষ্ট এডভোকেট মাসতুন আহমেদ ফোন করে পাঠাগার হিসেবে অনুদানের আবেদন পাঠাতে বললেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে । কিন্তু পাঠাগার নামে রেজিস্ট্রেশন লাগবে, তখন ডা. আবুল কাশেম স্মৃতি পাঠাগার নামে পৃথক কমিটি করে রেজুলেশন করে জাতীয় গণগ্রন্থাগার অধিদ্প্তর হতে রেজিস্ট্রেশন করা হল। এভাবে ডা. আবুল কাশেম স্মৃতি পাঠাগার ও ডা. আবুল কাশেম শিক্ষা ফাউন্ডেশন নামে প্রতিষ্ঠান দ্বয় চলতে থাকে। ২০১১ সালে আমুড়িয়া বাজারে জমি ক্রয় করে ২০১৪ সালে নিজস্ব ভবন নির্মান করা হয়।
অতপর ২০১১ সালে কুষ্টিয়ার চৌড়হাসে ফাউন্ডেশনের প্রধান লিযাজোঁ অফিস ও পাঠাগার স্থাপন করা হয় । ফাউন্ডেশন কর্তৃক গবেষণা কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য সেখানে ডা. আবুল কাশেম শিক্ষা গবেষনাকেন্দ্র ও পাঠাগার নামে রেজিস্ট্রেশন নেওয়া হয় । তারপর হতে মাগুরা কুষ্টিয়া , ঝিনাইদহ জেলায় ডা. আবুল কাশেম ফাউন্ডেশন কর্তৃক অনেকগুলি পাঠাগার স্থাপন করা হয় । সেগুলি রেজিস্ট্রেশনও নেওয়া হয়েছে পৃথক । এর পৃথক কমিটি ব্যবস্থাপনা ও ব্যাংক হিসাব রয়েছে । তবে সেগুল ডা. আবুল কাশেম শিক্ষা ফাউন্ডেশনের শাখা পাঠাগার বা সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এভাবে যশোর জেলাসহ ৫ জেলায় বর্তমানে ১৯ টি পাঠাগার ও ৪ টি যুব সংগঠন, ১ টি নারী-শিশু, ১ টি বিজ্ঞানসেবী, একটি স্কুল এবং ২ টি সামাজিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ফাউন্ডেশনের । এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছেন ডা. আবুল কাশেম শিক্ষা ফাউন্ডেশন । এর উন্নয়নে দরকার সকলের দেওয়া, পরামর্শ, কর্মউদ্যোগ ও সহযোগিতা।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে বাংলাদেশের ২৬ টি জেলায় ফাউন্ডেশনের ৬০৯ জন আজীবন সদস্য , দাতা সদস্য ও হিতৈষী সদস্য রয়েছেন । আজীবন সদস্য ফিস মাত্র ২ হাজর আট টাকা । ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠা বিধায় সদস্য ফিসটি এমন। আর সাধারন সদস্য ফিস বছরে ৩০৮ টাকা মাত্র। সদস্য হতে কমিটির যে কোন সদস্যের সাথে যোগায্ােগ করে ফরম পূরন করে ফিস দিয়ে সদস্য হওয়া যাবে। ক্রস চেকে সদস্য ফিস প্রদান বিধেয় । নগদ দিলে অবমশ্যই ২জনের স্বাক্ষরে পাকা রশিদ নিতে হবে।
ফাউন্ডেশনের কমিটি সদস্য হতে নূন্যতম যোগ্যতা মাস্টার্স পাশ । এমফিল ও পিএইচডি ধারীগণের অগ্রাধিকার। সাধারন সভায় হাত তেলা বা ভোটের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচিত হয় । দেশব্যাপী এর জেলা ও উপজেলা কমিটি করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বাস ওয়াহিদুজ্জামান বর্তমানে যশোর জেলায় কর্মরত । যশোর সদর কোতোয়ালী থানার ৪০০ মিটার দক্ষিনে ফাউন্ডেষশরে প্রধান লিয়াজো অফিস ও গবেষনা অনুষদ ‘শিক্ষা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’ অবস্থিত। বর্তমান বাংলাদেশের মত অদম্য গতিতে এগিয়ে যাক ডা. আবুল কাশেম শিক্ষা ফাউন্ডেশন।
text
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: শিক্ষা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ,
কারিগরি সহায়তায়: